ছাত্র রাজনীতি অজনপ্রিয় কেন?

বহুবছর ধরেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবী বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিভিল সোসাইটিসহ অভিভাবকমহলে। আসলে কেন তারা এই ধরনের দাবী জানান? ভেবে দেখলাম পত্রপত্রিকায় প্রায়ই শিরোনাম হয় “ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ”। আর এই দুই গ্রুপই হয় প্রধান রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন। আবার কেউ কেউ অভিমত দিয়ে থাকেন প্রধান রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করাটাই ছাত্র রাজনীতির সমস্যা। একটু তলিয়ে দেখি কেন ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করা লাগে? আধিপত্য বিস্তারের ফলাফলটা কি?

আধিপত্য বিস্তার করলে যা যা হতে পারে
১. সীট বানিজ্য করা যায়
২. ক্যাম্পাসে কনস্ট্রাকশন কাজ চললে সেখানে চাঁদাবাজি করা যায়
৩. ক্যাম্পাসের নানারকম প্রকিউরমেন্টে কমিশন খাওয়া যায়
৪. ডাইনিং এ ফাউ খাওয়া যায়
৫. সরকারী দলের ক্যাডার হলে পরবর্তীতে সরকারি চাকরি পেতে সুবিধা ইত্যাদি

এখন এইযে ১-৪ নম্বর ইস্যুগুলোকে ছাত্ররাজনীতি ভাবাটাই তো হচ্ছে চরম রকমের ভুল বোঝা। এইগুলো ছাত্ররাজনীতি নয়। এগুলো ফৌজদারী অপরাধ। কেউ ফৌজদারী অপরাধ করলে কেউ অভিযোগ করুক বা না করুক পুলিশ তাদেরকে এরেস্ট করে কোর্টে চালান দিবে। সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন করে এইসব ফৌজদারী অপরাধ করা স্বত্তেও পুলিশ যে যথাযথ আইনি ব্যাবস্থা নেয় না এইটাতো আইনি কাঠামোর সমস্যা, ছাত্ররাজনীতির না। অথচ বছরের পর বছর ধরে এইসব ফৌজদারী অপরাধ কে ছাত্ররাজনীতি নামে প্রতিষ্ঠিত করে এক ঢিলে দুই পাখি মারছে। এক এই রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর মধ্যে সিরিয়াস সমস্যা আছে সেইটা ধামাচাপা দেয়া এবং দুই ছাত্ররাজনীতিকে কালিমালিপ্ত করা।

ছাত্ররাজনীতিকে কালিমালিপ্ত করাটা বহু কারনেই জরুরী এইখানকার শাসকগোষ্ঠীর জন্যে। কারন এই দেশে যখনই কোন রাষ্ট্রিয় অন্যায় অবিচার হয়েছে তখনই ছাত্রসমাজ রুখে দাড়িয়েছে। এই অবজারভেশন থেকেই ছাত্ররাজনীতিকে ভিলেন বানানোর প্র‍য়াস প্লাস ক্যাম্পাসগুলিতে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতংকের আবহাওয়া তৈরী করা যাতে করে ছাত্রসমাজের দিক থেকে কোন প্রতিরোধের সম্ভাবনা কমানো। এবং এই উদ্দ্যেশ্য এখন পুরোপুরি সফল। ছাত্রসমাজ আর নৈতিকভাবে এবং ভয়ের কারনে আর কোন রাষ্ট্রিয় অপরাধকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম না।

নাহলে ভাবা যায় এরশাদ সরকারকে যেই ছাত্রসমাজ একসময় ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল তার চাইতে আজকে বহুগুনে অপশাসন স্বত্তেও ছাত্রসমাজ নীরব। কিংবা প্রতিরোধ খুব ঠুনকো।

আইনি কাঠামোর সমস্যাকে অ্যাড্রেস না করে স্রেফ ছাত্ররাজনীতি বন্ধের মধ্যেই সমস্যার সমাধান খোজা আরেকটা বিপদ। যদিও কোন রাজনৈতিক দলই তার ছাত্র সংগঠন বন্ধ করবে না তারপরও তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম সকল রাজনৈতিক দল তাদের ছাত্র সংগঠন বন্ধ করে দিল। তাতে কি দেশ থেকে অবিচার উঠে যাবে? পেশাগত জীবনে গিয়ে কি আপনি সকল জায়গায় ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাবেন?

তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবী না তুলে আইন কেন সবার ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্র‍য়োগ হয়না সেইটা সেই বাধাগুলি অপসারনের দাবী তোলেন। ছাত্ররাজনীতি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

 

প্রকৌশলী ফাইয়াজ ফিরোজ অনি 

সাবেক ছাত্রনেতা, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *